বরগুনা প্রতিনিধি ॥ অব্যাহত নদী ভাঙনে প্রতিদিনই আয়তনে ছোট হচ্ছে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলা। গত এক মাস ধরে পায়রা রুদ্ররুপ ধারণ করে আছে এবং আমতলী-তালতলী উপজেলার অন্তত অর্ধশত একর ফসলি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন করেছে। বিপরিতে পথে বসেছে হাজারও পরিবার, এখন থামছে না পায়রা নদীর ভাঙন। নতুন করে এখন হুমকির মুখে পড়েছে তালতলী আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জাহাজ নির্মাণসহ মেরামত শিল্প এলাকা। আমতলী-তালতলী উপজেলাকে পায়রা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত ব্লক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রমত্তা বুড়িশ্বর বা পায়রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ছিল ১২০০ মিটার। বর্তমানে নদীটি ভেঙে গড় প্রস্থ হয়েছে ৩৫০০ মিটার। গত ২৫ বছরে পায়রা নদীপাড়ের হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। ভিটামাটি হারিয়ে পথে বসেছে লক্ষাধিক মানুষ। সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে আমতলী ও তালতলীর পশ্চিম ঘটখালী, পৌরশহরের বৈঠাকাটা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, লোচা, আড়পাঙ্গাশিয়ার পশুরবুনিয়া, বালিয়াতলী, পচাঁকোড়ালিয়া সুইচ গেট, মৌপাড়া, গাবতলী, নকড়ী, তেতুঁলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গার অর্ধশত একর ফসলি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প এলাকা পায়রার ভাঙনের মুখে পড়েছে।
তালতলী উপজেলার মৌপাড়া গ্রামের হালিম মাতুব্বর ও মোশাররফ হোসেন সেন্টু ডাকুয়া বলেন, গত এক সপ্তাহে অন্তত চার একর জমি নদীতে ভেঙে গেছে। সন্ধ্যায় জমি দেখে যাই, সকালে এসে দেখি ওই জমি নাই। পায়রা নদীর হাত থেকে বসতঘর ও জমি রক্ষায় দ্রুত ব্লক নির্মাণের দাবি জানাই। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ন কবির বলেন, পশুরবুনিয়া, বালিয়াতলীর প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি পায়রা নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এখানে বসবাসরত কয়েকশ’ পরিবার ভিটামাটি হারিয়ে পথে বসবে। আমতলীর চাওড়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঘটখালী গ্রামের রেজাউল করিম পান্না বলেন, পায়রার ভাঙনে বিদ্যালয়, ক্লিনিক, মাদ্রাসা ও মসজিদসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাবার ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আমতলী পৌরশহরে বসবাস করছি। তালতলীর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের আলমগীর হাওলাদার বলেন, তেঁতুলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙায় পায়রার ভাঙন থামছেই না। প্রতিদিন ভেঙে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের আব্দুর জলিল জানান, বিকালে জমিতে ফসল রোপণ করে এসেছি। পরের দিন সকালে ওই জমি আর খুঁজে পাচ্ছি না। দ্রুত ব্লক নির্মাণ করে পায়রার ভাঙন রোধের দাবি জানাই। তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৈফিকুজ্জামান তনু বলেন, পায়রা নদীশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তালতলীর নিশানবাড়িয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়ন অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পায়রা নদী সংলগ্ন আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, পায়রা নদীভাঙনের হাত থেকে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আরও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে আমতলী উপজেলা ও পৌরশহর। আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা আমতলী-তালতলী উপজেলাকে ভয়াল পায়রা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় তার সুদৃষ্টি কামনা করছি। পায়রার ভাঙনে আমতলী-তালতলী ক্রমশ ছোট হচ্ছে আসছে। পায়রার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্লক নির্মাণের দাবি জানাই। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন- পায়রার ভাঙন রোধে পশ্চিম ঘটখালী, আমতলী পৌরসভা, পশুরবুনিয়া, বালিয়াতলী, মৌপাড়া, গাবতলী, জলায়ভাঙ্গা ও তেঁতুলবাড়িয়ার ৮ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক নির্মাণের জন্য ডিপিপি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রকল্প পাস হলে দ্রুত কাজ শুরু করব।’
Leave a Reply